1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

করোনা দংশনেও গম্ভীর ক্যাসুরিনা–রহস্য

  • Update Time : শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০২০
  • ৪১৮ Time View

উপমন্যু রায়

সেই ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউ!
কলকাতায় আমার ভালো লাগার, ভালবাসার সেই ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউ!
কত দুপুরের রোদ গায়ে মেখে এই রাস্তা দিয়ে আমি হেঁটে গিয়েছি! আবার কত বিকেলকে গোধূলির কোলে নীরবে আশ্রয় নিতে দেখেছি এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই। কত ক্লান্ত সময় এই পথের ধারে সবুজ ঘাস বিছানো ময়দানে চুপ করে বসে থেকেছি আমি।

হ্যাঁ, একাই। কারও সঙ্গ প্রয়োজন হয়নি। আর একা ক্যাসুরিনাও অদৃশ্য থেকে আমার যাবতীয় একাকীত্ব কাটিয়ে দিয়েছে। সন্ধে নামলে আবার ফেরার পথ ধরেছি এই অ্যাভিনিউ ধরেই। আগে আমার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলিতে তো এই অ্যাভিনিউই ছিল নিঃসঙ্গ আমার একমাত্র গন্তব্য। একমাত্র সঙ্গিনীও।
কিন্তু সব বদলে দিয়েছিল এই করোনা–সময়। পৃথিবী জুড়ে যে লকডাউন পর্ব শুরু হয়েছিল, তা আমাদের পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে যেন এক–একটা জম্বুদ্বীপে পরিণত করে দিতে চেয়েছিল।
ভারতে এখনও লকডাউন পুরোপুরি উঠে যায়নি। লকডাউনের পাশাপাশি শুরু হয়েছে আনলক পর্ব। দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে। সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার স্বার্থে।
ফলে নিয়মের কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল হয়েছে। একটু হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে যেন সবাই।
কিন্তু অবসাদ? অবচেতনে কোথায় যে সে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে, আর তা যে সবার মন থেকে কবে দূর হবে, কে জানে!

সেই সুযোগে আবার, হ্যাঁ— আবারও আমার প্রিয় ক্যাসুরিনা সকাশে হাজির হওয়ার সুযোগ পেলাম।
সেই ক্যাসুরিনা! আগে যতবার তাকে দেখেছি, ততবারই মুগ্ধ হয়েছি। রোমাঞ্চিত হয়েছি। পরিবর্তন হয়নি এতদিন এত কিছুর পরেও। এই ক্যাসুরিনা একই রকম আছে। আছে তার রহস্যও। সে আসলে তো রহস্যময়ীই।
চিরকালই এই রাস্তা দিয়ে মানুষের যাতায়াত কম। কল্লোলিনীর অন্য সব অংশের তুলনায় অনেক জনবিরল। বরং রাস্তার মাঝখান দিয়ে সাঁই সাঁই করে গাড়ি ছুটে যায় তার চেয়ে বেশি। পথের ধার ধরে কম পথচারীই হেঁটে যান। কখনও কখনও ঘোড়া চড়ে বেড়ায় রাস্তার এক পাশে অথবা বিস্তৃত ময়দানে।
লকডাউনের চরম পর্যায়ে ক্যাসুরিনা হয়তো একেবারেই একা হয়ে পড়েছিল। বুঝতে অসুবিধে হয়নি, কেউই তখন আসেনি এখানে। সময় বিশেষে বিক্ষিপ্ত ভাবে পুলিশকে হয়তো দেখা গিয়েছে। কিংবা যায়নি। আর এখনকার এই আনলক ধারায় সে যেন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি জনহীন।

কলকাতায় থেকেও যেন এই অ্যাভিনিউ কলকাতার নয়। কোন সে দূরের গন্ধ বয়ে নিয়ে আসে সে। তার শরীরের কোথায় যেন মিশে রয়েছে ইউরোপের অহঙ্কার। নির্জন সবুজ প্রকৃতিকে বুকে ধরে রেখেছে উদাসীন আভিজাত্যে।
বয়সও তো তার কম হল না! সেই ব্রিটিশ–কাল থেকে এই রাস্তা এ ভাবেই রেস কোর্স আর কুইন্স ওয়ের মাঝ দিয়ে রহস্যের জাল বিছিয়ে চলেছে।
সেইসব সময়ে হয়তো ব্রিটিশ সাহেব ও মেমরা এই পথ ধরে ঘোড়ার গাড়িতে চলে যেতেন। কখনও হয়তো এর সবুজ মাঠে কিছুক্ষণ বসতেন। আর এই একুশ শতকে একমাত্র আমিই যেন সেই রহস্যকে বুকের ভেতরে গ্রহণ করছি নীরবে। অনুভবও করে চলেছি মন–প্রাণ দিয়ে।
জানি, এখনও করোনা কাটেনি। কবে কাটবে কেউ বলতে পারছে না। প্রতিষেধকও চালু হয়ে যায়নি। মাঝে মাঝে তার পরীক্ষা পর্বের খবর পাই। কিন্তু কবে সেইসব প্রতিষেধক চালু হবে, সকলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন, জানি না! এখনও সংক্রমিত এবং মৃত্যুর দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাই প্রতি মুহূর্তে।
তবু অসভ্য আততায়ী এই করোনা–সময়ও ক্যাসুরিনাকে আমার মন থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে দিতে পারেনি। সুযোগ পেয়েই ছুটে এসেছি এখানে। দেখেছি, আজও একই রকম রয়ে গিয়েছে তার গাম্ভীর্য। আমফানের তাণ্ডব কিছু বৃক্ষ নিধনে সফল হলেও তার সৌন্দর্যকে বিন্দুমাত্র কেড়ে নিতে পারেনি।

কখনও কখনও এই ক্যাসুরিনা প্রেমে কেউ কেউ যে আমার সঙ্গী হয়নি, তা নয়। আমার কাছের বন্ধুদের অনেকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসে এই পথ ধরেই আমার পাশাপাশি হেঁটেছে। অনুভব করেছে আমার ক্যাসুরিনা তৃষ্ণাকে।
কাছের বন্ধু তো আমার নেহাত কম নয়! তবুও কেন যে আমি এত নিঃসঙ্গ, তা আমি নিজেই জানতে পারিনি কখনও। হয়তো এই ক্যাসুরিনা জানে। তাই আমার ছুটি দেখলেই সে–ও যেন আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকে অনবরত।
সেই কত কত বছর আগে থেকেই! তখন হয়তো আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। পেশাগত জীবনের ব্যস্ততা তখনও আমাকে ছুঁতে পারেনি। তার স্বার্থপরতা, তার নিষ্ঠুরতা অবসন্নও করে দেয়নি।
সেই তখন থেকেই রবিবার বা ছুটির দিনগুলিতে বিকেল হলেই আমি ছুটে আসতাম এখানে। গায়ে মেখে নিতাম ক্যাসুরিনার মন কেমন করা হাওয়া, রূপ–রস–গন্ধ।

তার পর কত বছর পেরিয়ে গিয়েছে! সম্ভাবনা দেখা দিলেও কলকাতা ছেড়ে স্থায়ী ভাবে অন্য কোনও দেশ বা শহরে গিয়ে আস্তানা তৈরি করিনি। বংশপরম্পরায় যে কলকাতার বাসিন্দা ছিলাম, তেমনই রয়েছি আজও।
তাই বহু বছরের সময়কে বাজি রেখে কলকাতার এই ক্যাসুরিনা আজ ‘আমার আপনার চেয়েও আপন’ হয়ে উঠেছে। একা একা এর বুক চিরে হাঁটতে হাঁটতে প্রতি মুহূর্তে আমি আমার হৃৎস্পন্দন অনুভব করতে পারি।
শুধু আমি নই, আজ বুঝতে পারি, ক্যাসুরিনাও একটু একটু করে আমাকে ভালবেসে ফেলেছে। একা একা পথ চলার ফাঁকে সে ফিসফিস করে আমার সঙ্গে কথা বলে। আমি কান পেতে শুনি।
যেন বুঝতে পারি তার কথা। সে–ও বুঝেছে আমাকে। তাই আমি একা হাঁটলেই সে আমার সঙ্গে গল্প করে।

শহুরে টানাপোড়েন, রেষারেষি, বিশ্বাসহীনতা আমায় হতাশ করে। নাগরিক জীবনের সেই যন্ত্রণা থেকে অনেক অনেকটাই বেরিয়ে আসি এখানে এলে। ক্যাসুরিনাও সেই দীর্ঘশ্বাস আমায় ভুলিয়ে দেয়।
জানি এখন সভ্যতার অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে এই কোভিড–১৯ সংক্রমণ সময়ে। লকডাউন নামে এক ভয়ঙ্কর শাস্তি নামিয়ে দিয়েছে পৃথিবী জুড়ে। নানা বিধিনিষেধের আড়ালে বন্দি করে ফেলেছে প্রতিটি মানুষকে।
ফলে কতদিন আসা হয়নি এই ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউতে! কতদিন থাকতে হয়েছে গৃহবন্দি! শুধু অফিস যাওয়া আর আসা। বাকি সময় কেটেছে বাড়িতেই।

আনলক পর্যায় এখন। আর সেই সুযোগেই আমার ছুটে আসা ক্যাসুরিনা তোমার কাছে। থিয়েটার রোড থেকে কুইন্স ওয়ে ধরে চলতে চলতে একেবারে শেষে সেই একই নির্জন পথ। আমার ক্যাসুরিনা।
ঠিক আগের মতোই। চরিত্রে এখনও কোনও বদল আসেনি। এখনও দূরের গন্ধবহ। একই রকম গম্ভীর। একই রকম মোহময়ী আর রহস্যময়ও।‌‌‌‌

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..